Huge crowd in Sraboni Mela at Tarokeswar
সুপর্ণা ভাদুড়ী:-তারকেশ্বরে বাবা তারকনাথের শ্রাবণী মেলায় শুরু থেকেই উপচে পড়া ভিড়। গত রবিবার শুরু থেকেই কয়েক দিনে লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম। একটাই স্লোগান ‘ ভোলে বাবা পার করে গা ‘ । এবার তারকনাথ এস্টেট এবং স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক। হাতরাসের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়। সেই সঙ্গে এবারে নির্মল মেলা করার জন্য প্রশাসনের সার্বিক প্রস্তুতি লক্ষ্য করা গেছে। উল্লেখ্য, শ্রাবণী মেলা শুরু হয়েছে ১৭ জুলাই অর্থাৎ ১ শ্রাবণ। তিথি অনুযায়ী তারকেশ্বর শ্রাবণী মেলা শুরু হয় গুরু পূর্ণিমা থেকে রাখি পূর্ণিমা পর্যন্ত। প্রসঙ্গত, এই মেলায় প্রশাসন আর একটা বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে তাহল নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যবহার।
উল্লেখ করা যেতে পারে এ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রাজ্য থেকেও ভক্তদের বাবার মাথায় জল ঢালার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মুক্তির উপায় খুঁজতে বাবা তারকনাথের শরণাপন্ন। এমন ভক্তির আবেগে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অসংখ্য মানুষ। বিশ্বাস আর ভক্তি মিলেমিশে একাকার তারকেশ্বর। এক আধ দিনের নয়, সারা বছরের চিত্র। কণ্ঠে একটাই আকুল আবেদন ‘ভোলে বাবা পার করে গা’। আসলে শিব ছিলেন মূলত অনার্যদের দেবতা। যার ফলে বেদে শিবের উল্লেখ মেলে না। আমাদের দেশে শ্রমজীবী মানুষ শিবের পুজো করত। অবশ্য বাবা তারকনাথের সৃষ্টি রহস্য অদ্ভূত। যাকে ঘিরে সারা দেশ জুড়ে মানুষের ভক্তি ও আবেগ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। কথিত, বহুকাল আগে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা শিবভক্ত বিষ্ণুদাস তারকেশ্বরের পাশে বসবাস করতেন। বিষ্ণুদাসের ভাই দেখেন কাছাকাছি জঙ্গলে একটি কালো পাথরের উপর এক গাভী দুধ দান করে আসে। এই অদ্ভুত দৃশ্য দেখে বিষ্ণুদাসকে জানায় ভাই। এরপর-ই বিষ্ণুদাস স্বপ্নাদেশ পান পাথরটিকে শিবজ্ঞানে পুজো করার। সেই শিব-ই আজকে তারকনাথ। তাই তারকেশ্বরের মহাদেবকে বলা বাবা তারকনাথ । কারণ তারকেশ্বরের শিবলিঙ্গ কেউ কখনও স্থাপন করেননি। প্রসঙ্গত, ১৭২৯ সালে প্রথমে একটি আটচালা মন্দির নির্মাণ করেন রাজা ভারমল্ল। মন্দিরের সামনে একটি নাটমন্দির এবং পাশে কালী ও লক্ষ্মী-নারায়ণের মন্দিরও স্থাপিত হয়। বাবা তারকনাথের উত্তর দিকে দুধপুকুর। এই পুকুরে ডুবে স্নান করলে যাবতীয় মনস্কামনা পূরণ হয়। এই মিথ ভক্তদের মনে আজও গেঁথে আছে। উল্লেখ করতেই হয় মা সারদাদেবী এই মন্দিরে একাধিকবার পুজো দিয়েছেন। তাছাড়া বাবা তারকনাথকে নিয়ে সিনেমা, যাত্রা ও নাটক মানুষের মনে দাগ কেটেছে। বাবা তারকনাথের সারা বছরই ভক্তের আনাগোনা থাকে। বিশেষ করে শিবের জন্মমাস শ্রাবণে লক্ষাধিক ভক্ত তারকনাথের মাথায় জল, দুধ ও ডাবের জল ঢেলে পুণ্য সঞ্চয় করতে আসেন। এরপরই ফাল্গুন মাসের শিবরাত্রি উপলক্ষে লক্ষনীয় ভিড় দেখা যায়।
মেলাও চলে। তারপর যেটা নজরকাড়ে তা হল গাজন উৎসব। এই উৎসবকে ঘিরে সন্ন্যাসদের কঠোর সাধনা ও ব্রত পালন মানুষের মনে শিবের প্রতি আলাদা শ্রদ্ধা জাগিয়ে তুলেছে। উৎসবের ক’টা দিন মহন্ত মহারাজ হৃষীকেশ আশ্রম দণ্ডস্বামী স্বয়ং উপস্থিত থাকেন। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে এ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রাজ্যের এবং বাংলাদেশের বহু মানুষ এখানে জড়ো হন। এদিকে শ্রাবণী মেলা উপলক্ষে যাতে গোলমাল না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে প্রশাসন। পুরোহিতদের প্রর্দশক পীযূষ মুখার্জি জানান, তারকেশ্বরের শ্রাবণী মেলা কেবলমাত্র এলাকার নয়, সমগ্র রাজ্যের অখণ্ড পবিত্রতার মেলা।