এখনই শেয়ার করুন।

হাওড়া ব্রিজে ,কলকাতা নামটির সঙ্গে যেন ঐতিহ্য জড়িয়ে। তিলোত্তমা কলকাতার স্পন্দন কি জানেন? হাওড়া ব্রিজ? কলকাতা ও হাওড়া দুই যমজ শহর। আর তাদের মধ্যেই সংযোগ রক্ষা করে এই হাওড়া ব্রিজ। যদিও শুধু হাওড়া ব্রিজ নামটা শুনলেই যেন আজও নানা কৌতূহল জেগে ওঠে মানুষের মনে।

যেমন ধরুন যে প্রশ্নটা সাধারণত সবার আগে আমাদের মনে আসে সেটা হল, পিলার ছাড়া শুধু নাট বল্টুর উপর নির্ভর করে কিভাবে যুগ যুগ ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে মস্ত এই ব্রিজ?

সত্যি কি হাওড়া ব্রিজের চাবি রয়েছে?

আর সেই চাবি দিয়ে দু ভাগে ভাগ করা যায় ইতিহাসের সাক্ষী এই হাওড়া ব্রিজকে?

তাহলে কোথায় সেই চাবি?

সত্যি কি হাওড়া ব্রিজ নির্মাণ করতে গিয়ে হুগলি নদীর তীরে পোতা হয়েছিল মানুষের মাথা?

প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খেলেও এর উত্তর হয়তো সঠিকভাবে জানা নেই অধিকাংশ মানুষেরই। তাই আসুন কলকাতার গর্ব এই হাওড়া ব্রিজ নিয়ে সেই সব অজানা তথ্যই জানা যাক-সেতু একটা ছিলই। আর সেটা ছিল পন্টুন ব্রিজ বা ভাসমান সেতু। নীচে নৌকা, উপরে পাটাতন। মাঝ বরাবর খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা। লম্বায় ১৫২৮ ফুট, ৪৮ ফুট চওড়া। দু’পাশে সাত ফুট ফুটপাত। জাহাজ-স্টিমার চলাচলের জন্য সেতুর মাঝখানে ২০০ ফুট খুলে দেওয়া হত। মানে স্টিমার এলেই সেতু বন্ধ। থমকে যেতে যান চলাচল। ভোঁ ভোঁ শব্দ করে স্টিমার পেরিয়ে যাবে, তার পর আবার খুলবে সেতু। ঠিক যেন রেলগেটে ট্রেন পেরোনোর মতো অবস্থা।

পুরনো হাওড়া ব্রিজের নকশা বানিয়েছিলেন স্যর ব্র্যাডফোর্ড লেসলি। ঊনবিংশ শতকের শেষ পর্বেই নতুন একটি সেতুর কথা ভাবা হচ্ছিল। দীর্ঘ পরিকল্পনা আর জল ঘোলার পর ১৯৪৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি নদী পেরিয়ে যাতায়াতের সুবিধার্থে নির্মাণ করা হয়েছিল এই ব্রিজ। তখন দেশজুড়ে চলছে ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থা। কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশ শাসন করার দৌলতে এই দেশের বুকে এখনও রয়ে গেছে ব্রিটিশ শক্তির নির্মিত নানা স্থাপত্য। এর মধ্যে অন্যতম হল এই হাওড়া ব্রিজ। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও আজও একইভাবে পরিচিত হাওড়া ব্রিজ। তবে, প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ যানবাহন এবং পথচারীর ভারবহনকারী এই ঝুলন্ত সেতুর ইতিহাস আজও আমাদের অবাক করে। সেই সঙ্গে কলকাতাবাসী এই হাওড়া ব্রিজ নিয়ে গর্বিত।

ভারত ও এশিয়ার প্রথম নোবেল জয়ী বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামকরণে এই ব্রিজের নাম রাখা হয় রবীন্দ্র সেতু। এই ব্রিজকে গ্রান্ড ওল্ড লেডি অফ কলকাতার গেটওয়ে নামেও ডাকা হয়। এই ব্রিজের দৈর্ঘ্য ৭০৫ মিটার এবং প্রস্থ ২১ মিটারেরও বেশি এবং উচ্চতা প্রায় ৮২ মিটার। প্রায় ছয় বছর ধরে চলেছিল ব্রিজের নির্মাণ কাজ। ১৯৩৬ সালে কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ১৯৪২ সালে। হাওড়া ব্রিজ তৈরিতে ২৬ হাজার ৫০০ টন ইস্পাত লেগেছিল।

তার মধ্যে ২৩ হাজার ৫০০ টন সরবরাহ করেছিল টাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি লিমিটেড। হাওড়া ব্রিজই সম্ভবত প্রথম ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্প, যার কাঁচামালের সবটাই ভারত থেকেই নেওয়া হয়েছিল। সালটা  ১৮৫৫ বা ৫৬ হবে, হুগলি নদী দুই পাড়ে দুই যমজ শহর হাওড়া, কলকাতায় জাঁকিয়ে ব্যবসা করছে ইংরেজরা। গড়ে উঠছে নতুন নতুন কারখানা। কিন্তু সমস্যা ওপার এপারে যাতায়াত নিয়ে। পন্টুন ব্রীজ বড়ই কমজরি। মাত্র এই ব্রিজের নীচে নৌকা ভাসছে, তার উপর কাঠের পাটাতন। মাঝবরাবর ২০০ ফুট মতন খুলে দেওয়া যায়। অবশ্য সব সময় নয়। স্টিমার বা জাহাজ এলে, তখন এই ব্যবস্থা।১৯২১ সাল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রায় শেষ। ব্রীজ খুলে জাহাজ বা স্টিমার যেতে দিলে বাঁধে আরেক সমস্যা। ব্রিজ বন্ধের ফলে রাস্তায় যানজট। তাই নতুন রকমের ব্রিজ তৈরির কল্পনা শুরু হল। ১৯২১ সালের শেষ দিকে ইংরেজ সরকার স্যার রাজেন্দ্র নাথ মুখার্জিকে চেয়ারম্যান করে একটি কমিটি গঠন করেন।

সেই কমিটি বহির্বাহু সেতু বা ক্যান্টি লিভার ব্রিজ অনুমোদন করে। কারণ এই ধরণের ব্রিজ হলে নীচে দিয়ে স্টিমার জাহাজ চলতে পারবে আবার উপর দিয়েও যাওয়া সহজ হবে। ১৯২৬ সালে পাশ হল নিউ হাওড়া ব্রিজ অ্যাক্ট।তৈরি হল হাওড়া ব্রীজ। ব্রিজের সারা সরিয়ে কোথাও নাট বল্টু ব্যবহার করা হয়নি।এমনকি নেই কোন পিলার।

ঝুলন্ত এই সেতু ১৯৪৩ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তবে উদ্বোধন ছাড়াই চালু করা হয় এই ব্রিজ। ১৯৬৫ সালে ব্রিজের নতুন নাম রাখা হয় রবীন্দ্র সেতু।অনেকে মনে করেন হাওড়া ব্রিজ নির্মাণের সময় নাকি নদীর তীরে পোতা হয়েছিল অসংখ্য মানুষের মাথা। আসলে এসব একেবারেই আজগুবি কথা। প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে তৈরি হয়েছে এই ব্রিজ। আর ব্রিজ দিয়ে চাবি খোলার বিষয়টা তো আরও কাল্পনিক।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *