পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুরের গোপীনাথপুর এলাকায় প্রাচীন জগন্নাথ মন্দির ১৭১৯ সালে নির্মিত, কেশপুরের জগন্নাথ মন্দির শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় স্থান নয়, বরং ঐতিহাসিক স্থাপত্যশৈলীর এক অমূল্য নিদর্শন।
রাজা যশোবন্তের অধীনে নির্মিত এই মন্দিরটি মেদিনীপুরের গোপীনাথপুরে অবস্থিত এবং ‘নবকলেবর’ রীতি ছাড়াও নিয়মিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজনের জন্য বিখ্যাত।মন্দিরের ইতিহাস থেকে জানা যায়,ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করা রানি শিরোমণির সাথে এই মন্দিরের ইতিহাস জড়িয়ে আছে।
বন্দী হওয়ার পর তিনি মুক্তি পেয়ে মেদিনীপুর শহরে বসবাস করেন এবং ‘হেবা-নামা’ রচনা করেন।মন্দিরের প্রধান মূর্তি হলেন শ্রী জগন্নাথ দেব, বলরাম ও সুভদ্রা। এছাড়াও মহাদেব, নারায়ণ এবং ৫২টি শালগ্রাম শিলা রয়েছে। মন্দিরের সেবাইতগণ সরকারি মঠের অধীনে লিখিত ছিলেন।সেই সময়ে জনৈক গ্রামবাসী অমুলা চরণ জানা মন্দিরের পুজাচারে তৎপর ভূমিকা পালন করেছিলেন।এক সময় ম্যালেরিয়ার কারণে গোপীনাথপুর, বাদাড় ইত্যাদি গ্রামগুলি জনশূন্য হয়ে পড়েছিল। মেদিনীপুরের ইতিহাস অনুযায়ী, দীর্ঘদিন গ্রামগুলি জনশূন্য থাকার ফলে এলাকাটি ঘন বনজঙ্গল দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। পরবর্তীকালে তমলুক এলাকার রাধামণি এই অঞ্চলের পুনর্বাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্দিরের সেবাইত রামপদ সাহু ও ভাস্কর মণ্ডল জানান “প্রতি বছর ফাল্গুন মাসে রাসের সময় মন্দির চত্বর কার্যত উৎসবের আকার ধারণ করে। ডেবরা পিংলা সবং কেশপুর খড়গপুর মেদিনীপুর সহ পার্শ্ববর্তী থানা গুলি থেকে লাখো লাখো দর্শণার্থী ও ভক্ত জনেরা এসে ভিড় করেন মন্দিরে। তিন দিন ধরে চলে নানান সংস্কৃতি অনুষ্ঠান ও মহাপ্রসাদের আয়োজন। এছাড়া বৎসরে প্রতিদিন বহু দর্শণার্থীরা মন্দির এসে প্রভু দর্শন করে পুজো দিয়ে যান।”
কেশপুরের এই জগন্নাথ মন্দির কেবলমাত্র ধর্মীয় অনুভূতিই জাগ্রত করে না, বরং ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের স্মৃতিও বহন করে চলেছে। প্রতিটি ইট ও মূর্তি বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।