এখনই শেয়ার করুন।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা ব্লকের কুলডিহা ক্ষুদ্রমণি প্রাথমিক বিদ্যালয় আজ নতুন রূপে সেজেছে। স্কুলের শিক্ষকদের নেতৃত্বে স্কুলটিতে চালু করা হয়েছে এক অভিনব উদ্যোগ।এক সময় যে দেয়ালগুলো ম্লান ও নীরব ছিল, আজ সেখানে জীবন্ত হয়ে উঠেছে শিক্ষার রঙ। দেয়ালে ফুটে উঠেছে নানা শিক্ষামূলক চিত্র।স্কুলের মাঠে রয়েছে নানা ফুল, ফল ও ভেষজ গাছ। ছোট ছোট শিশুরা সেইসব গাছের গুণাগুণ সম্পর্কে জানছে।

পাশাপাশি স্কুলে উন্নত ইন্টারনেট প্রযুক্তির সাহায্যে অনলাইনে নানান শিক্ষামূলক ক্লাস নেওয়া হয় এবং সর্বক্ষণ নজরদারির জন্য রয়েছে সিসিটিভি পরিষেবা। প্রাথমিক স্কুলে বর্তমানে ১০৯ জন পড়ুয়া এবং ৫জন শিক্ষক রয়েছেন।এই সকল উদ্যোগের ফলে ডেবরা কুলডিহা ক্ষুদ্রমনি প্রাথমিক বিদ্যালয় আজ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অন্যান্য স্কুলের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণেন্দু হাইত বলেন, “আমি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহণের পরেই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম এই স্কুলকে এতটাই ব্যতিক্রমী করে তুলব, যাতে দৃষ্টান্ত তৈরি হয়। প্রকৃতিকে বাঁচানোর শিক্ষা, এতটাই চিত্তাকর্ষক করে তোলার চেষ্টা করেছি যাতে শিশুরা বাড়ি থেকে বিদ্যালয় প্রতি বেশী আকৃষ্ট হয়। প্রকৃতির বৈচিত্র কে তুলে ধরা এবং প্রকৃতির প্রাণীকে বিদ্যালয় চাষ করা হয়েছে।মাছ চাষ এবং টবে সবজি লাগানো হয়েছে।স্কুলে চাষ হওয়া মাশরুম এবং মাছ একাধিকবার পড়ুয়াদের মিড ডে মিলের পাতে পড়েছে। পাশাপাশি হ্যাঙ্গিং গার্ডেন, ভার্টিক্যাল গার্ডেন ও ন্যাচারাল গার্ডেন তৈরীর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকেই এগোচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, “স্কুলে যে আমরা মনীষীদের জন্মদিন পালন করি , পড়ুয়ারাও একদিন মনিষী হতে পারবে। আজকের শিশু আগামী দিনে রাষ্ট্রের শক্তি। মনীষীদের মৃত্যুর পরও তাদের জন্মদিন পালন করা হয়, এই কনসেপ্ট কে মাথায় রেখে ওরাও যে একদিন বড় মানুষ হতে পারে , মহামানব হতে পারে ,সেই চিন্তাশক্তি পড়ুয়াদের বোধগম্য করাতে প্রতি মাসে শিশুদের জন্মদিন পালন করা হয়। ওই মাসে যতগুলো বাচ্চার জন্মদিন একই দিনে পালন করা হয়। সেদিন কেক কাটা হয়, মাংস, পায়েস ভালো-মন্দ করে খাওয়ানো হয় বাচ্চাদের। যেভাবে মানুষ প্রাইভেট স্কুলের দিকে ঝোঁক বাড়ছে,সেখানে আমাদের সরকারি স্কুলকে টিকিয়ে রাখতে গেলে প্রাইভেট স্কুলের কোন অংশে কমতি রাখলে চলবে না। আমাদের লক্ষ্য হল ছাত্রছাত্রীদের একটি আনন্দময় ও শিক্ষামূলক পরিবেশে শিক্ষাদান করা। এই উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে আমরা সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারছি বলে মনে হচ্ছে।”স্থানীয় অভিভাবকরাও স্কুল কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগের প্রশংসা করছেন।

এক অভিভাবক বলেন, “আমার ছেলে এই স্কুলে পড়ে খুবই খুশি। নতুন পরিবেশে সে অনেক কিছু শিখছে।”ডেবরা কুলডিহা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই উদ্যোগ আশা জাগাচ্ছে গ্রামীণ এলাকার শিক্ষার ভবিষ্যত।অন্যান্য গতানুগতিক সরকারি স্কুলের চিত্রের একেবারে বাইরে, শিক্ষকদের সদিচ্ছা থাকলে যে এমন একটি স্কুলের রূপদান দেওয়া সম্ভব, তা প্রমাণ করেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রত্যন্ত এলাকার এই প্রাথমিক স্কুল। শিক্ষকদের আন্তরিক উদ্যোগ নজর কাড়ছে অভিভাবক ও কচিকাঁচাদের।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *