এখনই শেয়ার করুন।

সুবর্ণরেখা নদীর তীরে জনপদ গুলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানান ইতিহাস। সেসব ইতিহাসের সঙ্গে মিলেমিশে গিয়েছে লোককথা। দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলের দেবদেবীর পুজোর ধরন তাই কিছুটা আলাদা করে রেখেছে শহরতলী থেকে। কালীপুজোর অনতি বিলম্ব পরেই করা হয়, মশা খেদা বা মশা খেদানো উৎসব। কিন্তু কালীপুজোর সঙ্গে কি সম্পর্ক রয়েছে এই উৎসবের? নাম শুনেই বুঝতে পারছেন এই উৎসবের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে মশার মিথ। সেই মশা তাড়ানোর জন্যই কি এই উৎসব পালন করা হয়? কালীপুজোর অমাবস্যা রাতের পরে প্রতি পদের ভোরে অনুষ্ঠিত হয় এই মশা খেদা উৎসব! ভোররাতে ছেড়েছো ছোকরাদের ঘুম থেকে তুলে দেন বাড়ির বড়রা! আবার কালীপুজোর গোটা রাত জেগে ভোররাতে মশা খেদাতে যান তারা। ছোটরা এবং বড়রা একসাথে জোটবদ্ধ হয়ে মশা তাড়ায়।

মশা তাড়ানোর জন্য রীতিমতো ঢাল তলোয়ারের ব্যবস্থা করা হয়। মশাখেদার সময় পুরনো খালি তেলের টিন, লোহা ভাঙ্গা করা ভাঙ্গা কুলা ভাঙ্গা ইত্যাদি নিয়ে আসা হয়। আবার তার সাথে মশা তাড়াতে লাঠির ব্যবস্থা করা হয়। সব মিলিয়ে এসব উপকরণ দিয়ে কান ঝালাপালা করে দেবার যোগাড়। সেভাবেই শব্দের উপদ্রবে মশা তাড়ানো হয়। ছড়া কাটতে কাটতে চলে এই মশা তাড়ানোর কাজ, মশা গেলা হু হু , মশা গেলা আড়ে বাড়ে।

গভীর রাতে রাস্তায় মশার দেখা পাওয়ার জন্য হাঁড়ির ভিতর মোমবাতি জ্বালিয়ে মুখে টর্চের মতন আলো ব্যবহার করা হয়। অদ্ভুত কায়দায় মশালের উপর কেরোসিন তেল দিয়ে আগুনের গোলা তৈরি করেন ছোটরা। কিন্তু কিভাবে হল এই অদ্ভুত রীতি? এই মশা খেদানো নিয়ে রীতিমত গবেষণা করেছেন পেশায় শিক্ষক সুদীপ কুমার খাড়া! তিনি বলছেন লৌকিক বিশ্বাস অনুযায়ী বর্ষা শেষের পর শীতে মশার উপদ্রব বাড়ে! কালীপুজোর পর থেকে রাজ্যে ডেঙ্গু ম্যালেরিয়া প্রকোপ বাড়ে। আর তাই মশা তাড়ানোর জন্য এই বন্দোবস্ত করা হয়। তবে তার আক্ষেপ বর্তমান আধুনিকতার যুগে এই মশা খেদা উৎসব প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। মশা খেদাতে অংশ নিয়েছেন ছোটদের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বজিৎ পাল সুব্রত পাল রিদম পাল রিপন মান্না সাগর দে, স্বাগতা দে, রনিতা প্রধান পৌলোমী পাযারা।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *