Big racket of fake passport found in North Bengal
অভিষেক ঘোষ, মালবাজার:- এবার ডুয়ার্সে আন্তর্জাতিক জাল পাসপোর্ট তৈরির বড় চক্রের হদিশ পেল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। আর সেই উদ্দেশ্যেই আচমকাই ডুয়ার্সের বিভিন্ন প্রান্তে ছোটাছুটি করতে দেখা গেল একটি বিশেষ দলকে। যদিও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জাল নথি ব্যবহার করে পাসপোর্ট তৈরির চক্রের সাথে যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছে ডুয়ার্সের বিভিন্ন এলাকার। সেই তদন্তের জন্য সিবিআই -এর বিশেষ দল এসেছে ডুয়ার্সে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে প্রাথমিকভাবে মেটেলি, মাল, ক্রান্তি, ময়নাগুড়ি সহ বেশ কয়েকটি ব্লকের সাইবার ক্যাফে মালিক, পঞ্চায়েত এবং পৌরসভার কর্মীদের তলব করা হয়েছে সিজিও কমপ্লেক্সে।
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা এবং সামরিক দিক থেকে ডুয়ার্সের গুরুত্ব বুঝেই এই এলাকায় সক্রিয় আন্তর্জাতিক জাল পাসপোর্ট চক্র। খুব সহজেই পাকিস্তান অথবা আফগানিস্তানের নাগরিকরা নেপাল হয়ে সড়কপথে প্রবেশ করতে পারে ভারতে। এদেশে এসেই তাদের প্রথম লক্ষ থাকে ভারতের নাগরিকত্ব অর্জন করা। সেজন্য তারা স্থানীয় পঞ্চায়েত কর্মী, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, এবং নির্বাচন কমিশনের কর্মীদের চিহ্নিত করে। প্রাথমিকভাবে একটি আন্তর্জাতিক পাসপোর্ট তৈরি করতে যে সমস্ত নথিপত্র প্রয়োজন হয়, তার সমস্ত কিছুই জোগান দেয় এই পঞ্চায়েত কর্মী অথবা রাজনৈতিক নেতারা। অনেক ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের বুথ লেভেল আধিকারিকদের এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এই বুথ লেভেল আধিকারিক তথা প্রাথমিক শিক্ষকদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তাদের থেকে আদায় করা হয় বিদ্যালয়ের শংসাপত্র। পরবর্তীতে সেই শংসাপত্র দেখিয়ে পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে তোলা হয় রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট। আর সেই জাল রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট দিয়েই অনায়াসেই যে কোন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ভোটার তালিকায় নাম তুলে নিতে পারে বিদেশি অনুপ্রবেশকারীরা। এই ভাবেই উত্তরবঙ্গ জুড়ে জাল পাসপোর্ট চক্রের জাল বিস্তার করছে প্রতিনিয়ত। তবে প্রশ্ন উঠছে পুলিশের ডিআইবি ভেরিফিকেশন নিয়ে। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের নাকের ডগা দিয়ে কিভাবে তৈরি হচ্ছে জাল পাসপোর্ট? সেই বিষয়েও কিন্তু তদন্ত করছে সিবিআই। সিবিআই এর রাডারে রয়েছে একাধিক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, পৌরসভা ও পঞ্চায়েত কর্মী সহ কয়েকজন বিএলও-র নাম। সে সঙ্গে অনেক সময় সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য জাল করে অবৈধ পাসপোর্ট তৈরির কাজ করছে একটি আন্তর্জাতিক চক্র।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে আফগানিস্তান, পাকিস্তান , বাংলাদেশের অবস্থান মোটেই সুবিধা জনক নেই। এই সমস্ত দেশের নাগরিকরা অন্যান্য দেশে কাজের সন্ধানে গেলে তাদেরকে অনেক অপমানিত হতে হয়। সম্ভবত সেই কারণেই বেআইনী ভাবে ভারতে প্রবেশ করে জাল পাসপোর্ট তৈরি করে কাজের সন্ধানে যাচ্ছে পাশ্চাত্যের দেশে। আর ঠিক এই ভাবে আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের সাধারণ নাগরিকের ছদ্মবেশে বিদেশের গুপ্তচরেরা এসে ঘাঁটি বানাতেই পারে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে। এই জাল পাসপোর্ট তৈরি করে যে সমস্ত অনুপ্রবেশকারীরা ভারত থেকে অন্য দেশে যাচ্ছে, তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। গোয়েন্দাদের অনুমান, বিদেশের কোন সন্ত্রাসবাদী হামলার সাথে ভারতে তৈরি জাল পাসপোর্টের সম্পর্ক পাওয়া গেলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের ছবি নষ্ট হতে পারে। আর ঠিক এটাই করতে চাইছে ভারতের শত্রু দেশগুলো। শুধু তাই নয়, বিঘ্নিত হতে পারে আমাদের দেশের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
সিবিআই এর সন্দেহ ডুয়ার্সের বুকে এই চক্রের চাল অনেকদূর পর্যন্ত ছড়িয়েছে। মালবাজার পৌরসভা সহ অন্যান্য গ্রাম পঞ্চায়েত গুলোতেও তার শিকড়ের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই সমস্ত বিষয়ে বুধবার মেটেলি থানার চালসা আউটপোষ্টে বেশ কয়েকজন পঞ্চায়েত এবং পুরসভার কর্মীদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআই -এর তদন্তকারী প্রতিনিধি দল। পাসপোর্ট নিয়ে বলতে সিবিআই -এর ডুয়ার্স অভিযান প্রসঙ্গে প্রশাসনিক এবং পুলিশ মহলে নানা গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। তবে অনেকে মনে করছেন, পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সঠিক যাচাই ছাড়া কিভাবে জাল পাসপোর্ট তৈরি হলো? তবে কি জাল পাসপোর্ট চক্রের শিকড় জড়িয়ে আছে পুলিশ মহলের সাথে? যদিও এইসব বিষয় এখনই প্রকাশ্যে আনতে চাইছে না কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা, তবে তারা নিশ্চিত এর পেছনে রাঘোব-বোয়ালরা জড়িত থাকতে পারে এবং তাদের এই বেআইনি কার্যকলাপ এক প্রকার দেশদ্রোহিতার সমান।