এখনই শেয়ার করুন।

শুভ্রজ্যোতি ঘোষ,পূর্ব বর্ধমান:-, পূর্ব বর্ধমানের রায়না দুই ব্লকের, রায়না থানার অন্তর্গত নেত্রখন্ড গ্রামে অবস্থিত সিদ্ধেশ্বরী দেবীর মন্দির। গ্রামে একটি বিশেষ রহস্য আছে যে, গ্রামটির নাম নেত্রখন্ড কেন? অনেক দূর দুরান্ত থেকে সাধুর এসেছিলেন, এনারা দেবী দর্শন করেন এবং দেরীর মন্দিরের চারপাশের অংশ দশনি করেছিলেন, দেবীর গেটের সামনে একটি কুণ্ড আছে সেটিকে দেখে ওনাজ বলেন এটি আংশিক সতীপীঠ। দক্ষযজের সময় মহাদেব যখন সন্ত্রীমাকে কাঁধে নিয়ে নাচছিলেন সেই সময় বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র যারা যে ৫১ টি সতীশিঠ তৈরি হয়েছিল তার মধ্যে উ নেত্রের একটি চোখের কোণ এই মায়ের সামনের কুত্ততে পড়েছিল। পুকুরটি আজও ত্রিকোনাকার, তন্ত্রের ভাষায় যোনি কৃষ্ণ নামে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এই পুকুরটি ত্রিকোণাকার তাই এই গ্রামটির নাম নেত্রখন্ড। সাধু-সন্তরা এসে এই জায়গাটিকে সতীপীঠ আখ্যা দিয়েছেন।

মন্দিরটি নাকি দক্ষযজ্ঞ আমল থেকেই আছে। কালাপাহাড়ি আমলের অনেক ভাঙা ইট পাথর গড়ে আছে চারপাশের জঙ্গলে। কালাপাহাড়ির আমলে কালাপাহাড় মায়ের মন্দির ভাঙার চেষ্টা করেছিল, প্রচলিত আছে যখন কালাপাহাড় মন্দির ভাঙতে এসেছিল সেই সময় মা ওনাকে ভূত দেখিয়ে ছেড়েছিল। যখন মন্দির ল্যাস করেছিল এবং মাতৃবিগ্রহে হাত দেয় তখন একটি তীব্র আলোর জ্যোতি দেখিয়েছিল এবং বলেছিল যদিবাঁচতে চাও এখান থেকে পালিয়ে যাও। এই দেবীর মন্দিরে বিল্পি, গুজরাটি, ব্যাঙ্গালোর, রাজস্থান থেকে ভক্তরা আসেন তাদের মনস্কামনা নিয়ে মা তাদের সব ইচ্ছা পূরণ করেন বলে ভক্তদের মত। হিস্টিরিয়া রোগ যেমন হাত পা বাঁকা, মুখ দিয়ে লালা পরা, হঠাৎ হটাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এই রোগটি ডাক্তারের কাছে কোন ওষুধ নেই, যতদিন বাঁচবে ততদিন ওষুধ খেয়ে থাকতে হবে। এইরকম বাক্তি দেবীর কাছে এসে ভালো হয়েছে তার প্রমাণ অনেকেই পেয়েছেনবলে নাবি স্থানীয় গ্রামবাসীদের। কালীপুজোর যে বিশেষ আকর্ষণ সেটি অন্য কোথাও হয় না, সেইটা এই মায়ের মন্দিরে হয়।সেটি হল দেবীর বিগ্রহের সামনে যে ঘাঁটি আছে, এই ঘরটিকে কাপড় পরিয়ে সাজিয়ে কোলে করে দেবীকে নিয়ে যায় চক্রবর্তী বাড়িতে। এই ঘটনাটি কেবলমাত্র এখানেই এখনো বর্তমান হয়ে আছে। কালীপুজোর দিন এবং পরের দিন প্রায় ১৫ হাজার ভক্তের সমাগম হয়। এছাড়াও দেবীর অন্নভোগের আয়োজন করা হয়। সেই অনাভোগ তরুরা গ্রহণ করেন। এখানে ৪০ থেকে ৫০ কড়াই খিচুড়ি হয়। দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন আসেন প্রসাদ গ্রহণ করার জন্য। সেবায়েত বলছেন, দেবীর আদেশে কিছু অনুষ্ঠান করার চেষ্টা করা হয় ।যেমন এবছরই ১৫ ই বৈশাখ (২৯ এপ্রিল) ঐদিন বামদের আমলে জ্ঞানবাবা, পরস্পরা আমদের বরানগরের যে মহারাজ তার নাম তাপস ভট্টাচার্য, অনার নেতৃত্বে দেবীর সামনে একটি চতুর্মুখ সপ্তসতী যজ্ঞ হয়েছিল। ভক্তদের কল্যাণের জন্য এই যজ্ঞ হয়েছিল। এই জায়গাটি ১১ বিঘা শশ্মাশানের উপর তৈরি যেটি মহাশ্মশান নামে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। বেদির নিয়ে একটি নরকযাল রয়েছে, এখ ানে দেবী সিদ্দেশ্বরী রূপে পুজিত হয়। বেদির নিচে আছে নর কঝাল তার উপরে আছে পঞ্চমুণ্ডির আসন ঠিক তার উপরে বিরাজমান সিদ্ধেশ্বরী দেবী। পঞ্চমুন্ডির আসনের উপরে বসে পুজা করা হতো কিছু অসুবিধার থাকার কারণে সেটিকে অনাত্র রাখহয়েছে। বর্তমানে হরিণের চামড়ার উপরে বসে পুজো করা হয়।

মন্দিরের ঠিক পাশেই একটি কন আছে সেখানে পঞ্চমুন্ডির আসন আছে সেখানে সাবু সন্ত্রাসীরা এসে ধান করেন। যাত্রীদের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে এই শ্মশানে মরা পোড়ানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যার পর এই জায়গাটি খুব ভয়ানক হয়ে থাকে। দিনের বেলা যতটাই ভালো রাতের বেলা ততটাই ভয়ানক। মন্দিরের পাহারার দায়িত্ব যেন চলে যায় শিয়াল, কুকুর এবং সাপেদের হাতে। ভোগের আয়োজন করেন বাড়ির মেয়েরা। পুজোর পায়ের দিন দেবীকে নিয়ে যাওয়া হয় চক্রবর্তী বাড়িতে, সেখানে গিয়ে মাকে সেবা দেওয়া হয়। একটি বড় পাথরের খালার উপরে পাঁচ কেজি চালের তার, ভাজা ভুজি, শাকের ঘন্ট, ফুলকপির তরকারি, কুমড়োর তরকারি, ছোলার ডাল, মাছের টক, পাঁঠার ঝোল এবং সর্বশেষে মায়ের কাছে নিবেদন করা ফরাভাজা, পায়েস ইত্যাদি। দেবী সবার কাছে নিজের মেয়ে বলে পরিচিত। মায়ের সামনেই একটি ছোট পুকুর আছে। বেশিরভাগ পুকুর হয় গোলাকার অমর চৌকাকার, কিন্তু এই পুকুরটি ত্রিকোনাকার। তন্ত্রের ভাষায় বলা হয় যোনিকুন্ড। তন্ত্রসাধকরা বলে গিয়েছেন এই যোনিকুন্ড থেকে মায়ের উদ্ভব। সতীর দেহত্যাগের উকা নেত্রের একটি ছোট আশ এই যোনিবৃত্ততে প্রতিস্থাপন হয়েছে। পুকুরটির জ কোনদিন শেষ হয় না যতই খারা আসুক। লোক শ্রুতি আজও ঘটে নানান অলৌকিক ঘটনা।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *