নিজস্ব প্রতিনিধি , পশ্চিম মেদিনীপুর:পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের বাঁকিবাঁধ পঞ্চায়েতের কমলা গ্রামে ছড়িয়েছে চরম আতঙ্ক। ইংরেজ আমলে তৈরি গ্রামে হঠাৎ করেই কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের উচ্ছেদ নোটিশ পৌঁছানোর পর ভিটেমাটি হারানোর আশঙ্কায় দিশাহারা গ্রামবাসীরা। নোটিশে ১৫ দিনের মধ্যে গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় ৩০০ পরিবারের জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকার।
উল্লেখ্য,১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কমলা এলাকায় একটি এয়ারপোর্ট তৈরি করেছিল ইংরেজ সরকার। যুদ্ধের সময় নিরাপত্তার কারণে গ্রামবাসীদের সাময়িক অন্যত্র সরে যেতে বলা হয়। যুদ্ধ শেষে তাঁরা নিজেদের ভিটেতে ফিরে আসেন। স্বাধীনতার পর, এই অঞ্চলে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এরমধ্যে ইংরেজদের পরিত্যক্ত এয়ারপোর্ট এলাকায় টাঁকশাল ও কোবরা বাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও স্থাপন করা হয়।এরপর ২০২২ সালে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে প্রথমবার উচ্ছেদের নোটিশ দেওয়া হয়। তখনই গ্রামবাসীরা তাদের নথিপত্র সহ মন্ত্রকের কাছে গিয়ে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তবে তাতে কোনও সমাধান হয়নি। এবার ফের নোটিশ আসার পর গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।গ্রামের এক বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “পাঁচ পুরুষ ধরে এখানে বাস করছি। হঠাৎ করে উঠে যাওয়ার নির্দেশ মানবো না। পুনর্বাসন ছাড়া এটা মেনে নেওয়া অসম্ভব।”
ঘটনা প্রসঙ্গে মেদিনীপুর সদরের মহকুমা শাসক মধুমিতা মুখার্জি জানান, “এখনও সরকারিভাবে আমাদের কাছে কোনও নোটিশ আসেনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে কাগজপত্র যাচাই করতে হবে। যদি উচ্ছেদ করতে হয়, তবে পুনর্বাসনের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।”এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাপানউতোর চরমে উঠেছে। বিরোধীদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের মানবিকতার অভাবের কারণেই এমন পরিস্থিতি। অন্যদিকে, শাসক দল প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছে।গ্রামবাসীরা এখন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে কোনও প্রতিনিধি না আসা পর্যন্ত তাঁদের দুশ্চিন্তা কাটছে না। মাথার ছাদ হারানোর ভয় গ্রাস করেছে ৩০০ পরিবারকে। সরকার ও প্রশাসনের মানবিক হস্তক্ষেপ এখন তাঁদের একমাত্র ভরসা।